মোঃ মোক্তার হোসাইন সোনারগাঁ(নারায়ণগঞ্জ)
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলায় বসতবাড়ি, গরুর খামার, ফলজ বাগান, নদী ও সরকারি খাস জমি দখলের ভয়ঙ্কর চিত্র পাওয়া গেছে। অভিযোগের তীর উঠেছে আলোচিত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আল মোস্তফা গ্রুপের দিকে। আষাঢ়িয়ার চর গ্রাম এখন দখল ও ভয়ের রাজত্বে পরিণত হয়েছে।
গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আষাঢ়িয়ার চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়— ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে নদীর এক তৃতীয়াংশ ভরাট করে রাস্তা বানানো হচ্ছে। বাড়ির পাশের ফলজ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বহু পরিবারকে ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজুল ইসলাম, স্থানীয় এক কৃষক, কাঁদতে কাঁদতে জানান—
“আমার গরুর খামার ও বসতবাড়ি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে আল মোস্তফা। এখন উল্টো আমাকে হুমকি দিচ্ছে বাড়ি ছেড়ে যেতে। গরু-ছাগল নিয়ে কোথায় যাব জানি না।”
আরেক নারী ভুক্তভোগী সুমি আক্তারের ভাষ্য,
“আমরা যদি প্রতিবাদ করি, রাতের অন্ধকারে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। গ্রামের সবাই এখন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।”
এ বিষয়ে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয় সম্পাদক আব্দুল জলিল বলেন,
“আমাকে মিথ্যাভাবে অভিযুক্ত করা হচ্ছে যে আমি নাকি আল মোস্তফাকে সহযোগিতা করছি। আসলে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয়ে এনিমি সম্পত্তি ও খাস জমি দখল করছে তারা।”
আল মোস্তফা গ্রুপের কর্ণধার মোস্তফা কামাল খুদেবার্তায় দাবি করেন,
“আমরা বালু ভরাট বন্ধ করেছি। বিষয়টি বিআইডব্লিউটিএ ও এসি ল্যান্ডসহ কর্তৃপক্ষ অবগত। এটি কোম্পানির জমি। প্রয়োজনে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করা হবে।”
সোনারগাঁও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌফিকুর রহমান বলেন,
“নদী ভরাটের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমি গিয়ে কাজ বন্ধ করেছি। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের মতে, দীর্ঘদিন ধরেই প্রভাবশালী মহল নদী ও খাস জমি দখল করে আসছে। কিন্তু আল মোস্তফা গ্রুপ সরাসরি বসতভিটা ও খামারে হাত দেওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গ্রামের মানুষ এখন প্রতিদিন গৃহহারা হওয়ার আতঙ্কে দিন পার করছে।
সরকারি খাস জমি ও নদী রক্ষা করার কথা থাকলেও বাস্তবে চলছে দখল ও ভরাটের খেলা। আল মোস্তফা গ্রুপের দখলবাজি কেবল একটি উদাহরণ। প্রশাসন কাগজে-কলমে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিলেও স্থানীয়রা বলছেন, বাস্তব পদক্ষেপ ছাড়া এই আতঙ্ক কখনো কাটবে না।